‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর না করলে জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গঠন অসম্ভব’

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

‘জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গঠন করতে হলে দক্ষ, পেশাদারদের ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, পদমর্যাদা ক্রম নির্ধারণসহ সকল ক্যাডারের মধ্যে সমতা নিশ্চিত এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে। সিভিল সার্ভিস সংস্কার না করলে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন বারবার ব্যর্থ হবে।’

শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ আয়োজিত ‘জনবান্ধন সিভির সার্ভিস বিনির্মাণে করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আহ্বায়ক কৃষিবিদ মো. আরিফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পরিষদের সমন্বয়ক ফারহানা আক্তার।

এ সময় আন্তঃক্যাডার পরষিদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেন। সারাদেশ থেকে ২৫টি ক্যাডারের প্রায় ৮ হাজার কর্মকর্তা সমাবেশে উপস্থিত হন।

সভায় বক্তারা বলেন, প্রশাসনের সকল স্তরে অনিয়ম, কোটাবৈষম্য, অসমতা দূর করে একটি গতিশীল জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করতে চান ২৫টি আন্তঃক্যাডারের কর্মকর্তারা। ২৫টি আন্তঃক্যাডারভুক্ত পরিষদ সকল ধরনের কোটা বিলোপের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়তে বদ্ধ পরিকর।

বক্তারা আরও বলেন, বিরাজমান প্রশাসনিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ২৫টি ক্যাডারের অনেকগুলো শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন নেই। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুপারিশ পেশ করবে বলে প্রত্যাশা করে।

পাশাপশি ডিএস পুলের কোটাব্যবস্থা বাতিল করারও দাবি তোলেন বক্তারা। বলেন, আমরা চাই চাকরিকালীন কোনো কোটাবৈষম্য থাকবে না। সিভিল সার্ভিসের মধ্যে একটি ক্যাডার শাসকের ভূমিকায় রয়েছে। সিভিল সার্ভিসের বৈষম্য নিরসন করতে হবে। কৃত পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় চাই। ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় হবে তার।  

আলোচনা সভায় দক্ষ ও পেশাদার সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, পদমর্যাদা ক্রম নির্ধারণসহ সকল ক্যাডারের মধ্যে সমতার দাবি জানানো হয়। একই দেশে একটি ক্যাডারের কর্মকর্তা পদ না থাকা সত্ত্বেও প্রমোশন পাবে, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদ থাকা সত্ত্বেও প্রমোশন পাবে না, এটা কোনো আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থা হতে পারে না।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাষ্ট্র ও জনকল্যাণে কমিশন একটি আধুনিক সেবামূলক সিভিল সার্ভিস গঠনে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পেশ করা হবে বলে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, কমিশনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে অনেকে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য প্রচার শুরু করেছে। সিনিয়র সার্ভিস পুলের (উপসচিব পুল) পদগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারের নয়। Senior Services Pool (SSP) Order, 1979 অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে এ সকল পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে কোটা পদ্ধতি চালু রেখেছে প্রশাসন ক্যাডার।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা মনে করেন, ২০২৪-এর নির্বাচনের পর উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদ নিজেদের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রশাসন ক্যাডার, যা মেধাভিত্তিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রগঠনে অন্তরায়। তারা সরকারের পাশে থাকার সুবাদে প্রথমে SSP আইন বাতিল এবং ২০১৮-এর নির্বাচনের পর Services Act 1975 (যার ওপর ভিত্তি করে SSP চালু হয়) রহিত করে ।

সকল সেক্টরে একটি প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সিভিল সার্ভিসের পেশাদারত্ব মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে এই দেশের জনগণ। তাই কার্যকর জনসেবা নিশ্চিত করতে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছে, অর্থাৎ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে স্ব-স্ব ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা পদায়নের দাবি জানান।  

এ সময় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের পক্ষ থেকে ৫ দফা কর্মসূচি তুলে ধরেন।

১। আগামী ১ মাস ভবিষ্যৎ সিভিল সার্ভিসের রূপরেখা বিষয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে।

২। জনবান্ধব রাষ্ট্রগঠনে সিভিল সার্ভিস সংস্কারের জন্য সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে জনগণের মতামত গ্রহণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

৩। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক চূড়ান্ত সুপারিশে ২৫ ক্যাডারের মতামতের প্রতিফলন দেখতে চায় নেতৃবৃন্দ। সে সময় পর্যন্ত সকল সদস্যকে ধৈর্য্য ধারণ করতে আহ্ববান করা হয়।

৪। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সিভিল সার্ভিস ক্যাডার বহির্ভুতকরণের চিন্তা হতে বিরত থাকতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে আহ্বান করা হয়।

৫। রাষ্ট্রের দায়িত্বভার হাতে থাকায় সেটির অপব্যবহার করে সামান্য অপরাধে ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা মহোদয়দের সাথে দেখা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হবে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে চাকুরী বিধি অনুসরণ পূর্বক বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।

এছাড়া আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের পক্ষ থেকে ২৫ ক্যাডারের সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান

১. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক চূড়ান্ত সুপারিশ প্রস্তাব প্রদানের আগে কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন না।

২) রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে যেন কোনো গোষ্ঠী কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পরিষদের সকল সদস্য সতর্ক থাকবেন।

৩) কিছু গোষ্ঠী পরিষদের সদস্যদের উসকে দিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করতে চাচ্ছে, এ বিষয়ে সহনশীল থেকে এবং কোনো ধরনের প্ররোচনায় না গিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করুন।

৪) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক থাকা এবং কাউকে আঘাত বা হেয় করে কোনো মন্তব্য না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩জানুয়ারি/আরএইচ/এজে)