মুদ্রাস্ফীতির হিসাবেই দেনমোহর, আদালতের ঐতিহাসিক রায়

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০২৫, ২০:২১

কুমিল্লা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মুদ্রাস্ফীতির তারতম্যের সঙ্গে মিলিয়ে বাদীকে দেনমোহর পরিশোধের রায় দিয়েছেন কুমিল্লার পারিবারিক আদালত। একই সঙ্গে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধের কথাও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) কুমিল্লার পারিবারিক আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ শেখ সাদী রহমান এই ব্যতিক্রমী রায় ঘোষণা করেন বলে জানান নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল- এর সরকারি কৌঁসুলি বদিউল আলম সুজন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আজাদ হোসেন বলেন, ২০২২ সালে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে একই উপজেলার বিল্লাল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের বিয়ে হয়। বিয়েতে লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উসুল দেখিয়ে লাখ টাকা বাকি রাখা হয়।

২০২৩ সালের জুন মাসে ইব্রাহিম খলিল তালাক দিলে দেনমোহর ভরণপোষণের প্রার্থনা করে সুমাইয়া কুমিল্লা পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। ওই মামলার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, বাদী বিবাদীর বিয়ে হয়েছিল ২০২২ সালে, এখন ২০২৫ সাল। প্রতিবছর মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকার মানের তারতম্য ঘটে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট।

অবস্থায়, দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারা প্রয়োগ করে মুদ্রাস্ফীতির তারতম্য অনুসারে বাদীর দেনমোহরের প্রকৃত মূল্য লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলো এবং বাদী ওই টাকা পাওয়ার হকদার।রায়ে বলেন আদালত।

রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, বাদীর প্রার্থিতামতে তিনি ছয় মাসের ভরণপোষণেখোরপোশবাবদ ৪২ হাজার টাকা এবং ইদ্দতকালীন তিন মাসের ভরণপোষণ বাবদ ২১ হাজার টাকার হকদার।

নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল- এর সরকারি কৌঁসুলি বদিউল আলম সুজন বলেন, ‘ রায়কে অবহেলিত নারীসমাজের জন্য যুগান্তকারী রায় বলে মনে করছি। কারণ, আমাদের মুসলিম রীতিতে বিবাহ বিচ্ছেদের পর দেনমোহর নিয়ে নারীদের অনেক বঞ্চনা অবহেলার শিকার হতে হয়। কিন্তু বিজ্ঞ বিচারক বাস্তবতা উপলব্ধি করে যে রায় দিলেন তা অবশ্যই ব্যতিক্রম যুগান্তকারী।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কুমিল্লা জেলার আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে সচেতনতা তৈরি হবে যেন কেউ নারীদের পাওনা দেনমোহর নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা না করে। বরং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেনমোহর পরিশোধের সচেতনতা তৈরি হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৬মার্চ/মোআ)