ধানমন্ডিতে ডাকাত ধরায় পুরস্কার পাচ্ছেন ৫ শ্রমিক, নিয়োগ পাচ্ছেন ‘ফোর্সে’
প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৪:৫৬

রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘অলংকার নিকেতন’ জুয়েলার্সের মালিক এম এ হান্নান আজাদের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। র্যাব, ম্যাজিস্ট্রেট ও ছাত্র পরিচয়ে ওই বাসা থেকে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতদল। এ ঘটনায় পাশে নির্মাণাধীন ভবনের পাঁচজন শ্রমিক জীবন বাজি রখে চার ডাকাতকে ধরে ফেলে।
সাহসিকতার জন্য সেই পাঁচজন শ্রমিককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরষ্কারের ঘোষণা করেছে ডিএমপি। এছাড়া এই পাঁচ শ্রমিককে পুলিশের অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
তিনি বলেন, ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের প্রতিরোধ করা এবং তাদেরকে ধরতে সহায়তায় করায় পাঁচজন শ্রমিকের নাম পাওয়া গেছে। সাহসিকতার জন্য ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী পাঁচ শ্রমিকের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এছাড়া এই পাঁচজনকে অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকার নিরাপত্তা পরিদর্শন করতে মাঝেমধ্যেই বের হচ্ছেন। এরমধ্যে চেকপোস্ট-টহল জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু বাসাবাড়িতে এভাবে ডাকাতির ঘটনা মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। এটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা নাকি চেকপোস্ট-টহলে যারা দায়িত্বরত তাদের গাফিলতি রয়েছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, চলমান রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ডিএমপি বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় টহল জোরদার, কৌশলগত জায়গায় তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা। এছাড়া দুই-একটি যে ঘটনা ঘটছে সেগুলোর সঙ্গে সঙ্গে উদঘাটন করে আসামি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এরমধ্যে কেউ যদি অপরাধ করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। আর ইতোমধ্যে যে সব ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো উদঘাটন করা হয়েছে।
র্যাব, ম্যাজিস্ট্রেট ও ছাত্র পরিচয়ে এমন দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় নগরবাসী কীভাবে বুঝবে আসলে কোন অভিযান ভুয়া আর কোন অভিযান সত্য?
এমন প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ধানমন্ডির ডাকাতির ঘটনায় সেখানকার বাসার মালিক ৯৯৯-এ ফোন করেন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ যায়। আমরা জনগণ বারবার অনুরোধ করছি আপনাদের সামনে যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯-এ ফোন করবেন।
একই সংবাদ সম্মেলন রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমকে প্রশ্ন করা হয় ডাকাতদল র্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয় দিয়েছে তারা আদৌ এসব বাহিনীর সদস্য কিনা।
এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ডাকাতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাদের ২৫ থেকে ৩০ জনের টিম কাজ করেছে ডাকাতির কাজে। তাদের মূল পরিচয় উদঘাটন করে বিস্তারিত জানানো হবে। প্রাথমিকাভবে গ্রেপ্তার ৬ ডাকাত এলোপাতাড়ি তথ্য দিয়েছে, তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি বলেন, গত বছরের শেষের দিকে অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স দোকান থেকে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছিল। এ ঘটনায় মামলাও হয় তেজগাঁও থানায়। এরপর ২৬ মার্চ ভোরে ধানমন্ডিতে ওই জুয়েলার্সের মালিকের বাসায় ডাকাতদল ডাকাতি করে। দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও নগদ টাকাসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩) ও ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২), সুমন (২৯), আবদুল্লাহ (৩২) ও গাড়িচালক সুমন (২৯)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র্যাব লেখা ক্যাপ, দুটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরাতন লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৭মার্চ/এলএম/এজে)