প্রবাসী ছেলের মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে মাকে অপহরণ

প্রকাশ | ০২ মে ২০২৫, ২০:৪৮ | আপডেট: ০২ মে ২০২৫, ২০:৫২

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় প্রবাসী ছেলের মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে তার মাকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। 

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার লিয়াকত আলী শেখ নামের একজনকে আজ শুক্রবার (২ মে) জেল হাজতে পাঠিয়েছি পুলিশ। 

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার মানাখান বড়ইতলা এলাকা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার লিয়াকত আলী শেখ ওই এলাকার মৃত সোহরাব আলি শেখের ছেলে। 

পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়,  উপজেলার কদমতলা এলাকার আরেফিন আহমেদ নামের এক যুবককে ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ মাস আগে তুরস্ক এবং এরপর লিবিয়ায় নিয়ে যায় স্থানীয় দালাল লিয়াকত আলী শেখ। 

পরে চক্রের সদস্যরা তাকে জিম্মি করে কয়েক দফায় ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করে। জমিজমা বিক্রি ও ধারদেনা করে দুই ধাপে ৩০ লাখ টাকা দালাল লিয়াকত আলী শেখের কাছে তুলে দেয় আরেফিনের পরিবার।

এরপর ইটালি পৌঁছানোর আগে আগে চক্রটি আরও আট লাখ টাকা দাবি করে। আরেফিনের পরিবার পুরো টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হলে দালাল চক্রের সদস্যরা বুধবার সকালে চাকধ বাজার এলাকা থেকে তার মা সুমি বেগমকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা তাকে আটকে রেখে পরিবারকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

এ সময় ভুক্তভোগীর পরিবার নড়িয়া থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ গিয়ে বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে অভিযুক্ত দালাল লিয়াকত আলীর বাড়ির একটি কক্ষ থেকে সুমি বেগমকে উদ্ধার এবং লিয়াকত আলীকে আটক করে। 

সুমি বেগম বলেন, আমার ছেলেকে ইটালি নেওয়ার কথা বলে প্রথমে আমার কাছে ১৪ লাখ টাকা নেয়। এর কিছুদিন পরে ছেলেকে লিবিয়ায় আটকে রেখে আরও ১৬ লাখ টাকা আদায় করে। আমি জমিজমা বিক্রি ও ধারদেনা করে দালাল লিয়াকত আলীকে দুই ধাপে ৩০ লাখ টাকা দেই। এর মধ্যে আমার ছেলে ইটালি পৌঁছে যায়।

সুমি বেগম আরও বলেন, পরে দালাল লিয়াকত আমাকে জানায় আরও আট লাখ টাকা দিতে হবে। আমি দিতে রাজি না হওয়ায় বুধবার সকালে আমার মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বাসায় আসার পথে লিয়াকত আমাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে তার বাড়িতে একটি কক্ষে আটকে রেখে আমার পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।

তার ওপর উপর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে অভিযোগ করে সুমি বেগম বলেন, আমার স্বামী নড়ীয়া থানায় জানালে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। আমি ন্যয়বিচার দাবি করছি। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানবাধিকারকর্মীরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে আসছে। এখন তারা এতটাই বেপরোয়া যে পরিবারের সদস্যদের অপহরণের সাহস করছে। এদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, একজন ভদ্রমহিলাকে আটকে রেখে মুক্তিপণ চাচ্ছে একটি চক্র, এমন খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভিকটিমকে উদ্ধারের পাশাপাশি ওই চক্রের একজনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠঅনো হয়েছে।ভুক্তভোগীর পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২মে/মোআ)