অভিনব নারীচোর চক্রের চার তরুণী আটক, খিলগাঁওয়ে স্বস্তি
প্রকাশ | ২৭ মে ২০২৫, ১৩:০৬ | আপডেট: ০১ জুন ২০২৫, ১৯:৫৪

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় চার তরুণী মিলে গড়ে তুলেছিলেন একটি চোর চক্র। যারা সুযোগ পেলেই বাসা বাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করছিল।
ধারাবাহিকভাবে চলা এই চুরির ঘটনায় অতিষ্ঠ ছিল এলাকাবাসী। এবার চুরির সময় হাতে নাতে ধরা পড়েছে চোরচক্রের সদস্যরা। মিলেছে ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ।
মঙ্গলবার ভোরে খিলগাঁও গোরান মাজার গলির একটি গ্যারেজে চুরি করতে গিয়ে তারা ধরা পড়েন।
ভূক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, ভোররাতে বাপ্পি পরিবহন নামের একটি গ্যারেজে প্রবেশ করে ঘুমন্ত কর্মচারীদের মোবাইল চুরি করার চেষ্টা চালায় চক্রটি। চক্রের মূলহোতা শাহানা ও নিলুফা ওই গ্যারেজে ঢুকে মোবাইল, নগদ টাকা কোথায় আছে সেটা নিশ্চিত করে। পরে তাদের দেখানো তথ্যে চক্রের অন্য এক সদস্য মোবাইল চুরি করতে ওই গ্যারেজের কক্ষে প্রবেশ করে। যা টের পেয়ে যায় সেখানকার কর্মচারী আব্দুল শুকুর আলী। মোবাইল চুরির দৃশ্য দেখে তার চিৎকারে পাশেই ঘুমিয়ে থাকা আরেক কর্মচারী সিফাত জেগে উঠলে তারা মিলে এক নারী চোরকে ধরে ফেলেন। পরে চক্রের অন্য তিনজন মিলে শুকুরকে মারধর করে আটককৃত চোরকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হলে এগিয়ে আসে স্থানীয়রা। পরে তাদের সহায়তায় তিন নারীকে আটক করা হয়।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’এ ফোন কল পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় খিলগাঁও থানা পুলিশ। এসময় চোরচক্রের চার সদস্যকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে।
খিলগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, গোরান এলাকায় স্থানীয় চার নারী চোরকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। গ্যারেজের মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই ঘটনায় তারা মামলা করবে; তাই ঊধ্বর্তনদের সঙ্গে আলাপ করছে।
স্থানীয়দের দাবি, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চুরি করে আসছিল। নারী হওয়ার কারণে তারা বারবার পাড় পেয়ে যাচ্ছিলো। এদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার অভিযোগও রয়েছে। এবার ধরা পড়ার পর স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
গোরান এলাকার বাসিন্দা তানভীর রিজভী বলেন, ‘একদিন চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় আমার মানিব্যাগ চুরি করে এই চক্রের এক সদস্য। কিন্তু নারী হওয়ার কারণে তখন কিছু করতে পারিনি। এখন ধরা পড়েছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে আমাদের এলাকায় চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। এই নারী চোরচক্র আটকের পর এলাকায় হয়ত স্বস্তি ফিরবে।’ দিদারুলের মতো স্থানীয়দের আকাঙ্খা— এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে খিলগাঁও এলাকায় চুরি কমবে। তারা আবারও নিরাপদে বসবাস করতে পারবেন।
গ্যারেজটির কর্মচারী আব্দুল শুক্কুর আলী বলেন, গত রাতে আমি ও আমার সহকর্মী সিফাত কাজ শেষে গ্যারেজের ভেতর ঘুমিয়েছিলাম। ভোররাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভাঙলে দেখতে পাই কেউ একজন সিটের ওপর রাখা মোবাইল চুরি করছে। আমার চিৎকারে সিফাতের ঘুম ভাঙলে তার সহায়তায় চোরকে ধরে ফেলি। পরে স্থানীয়দের সহায়তার তার সাথে থাকা আরও তিন নারীকে ধরা হয়। পরে আমরা ৯৯৯-এ কল দিয়ে ঘটনাটি জানালে খিলগাঁও থানা পুলিশের সদস্যরা আমাদের গ্যারেজে আসে এবং উৎসুক জনতার মধ্য থেকে তাদেরকে থানায় নিয়ে যায়।
নারী চক্রটির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ:
গত সপ্তাহে বাপ্পি পরিবহন নামক এই গ্যারেজের অন্য একটি রুম থেকেও মোবাইল চুরি হয়। পুনরায় চুরি করতে এসে আটকের পর আগের সিটিটিভি ফুটেজ দেখে গ্যারেজের কর্মচারীরা নিশ্চিত করেন আগেও চুরির ঘটনায় এই নারী চক্র জড়িত। সম্প্রতি পাশের একটি ভবন থেকে টাকা চুরি, চলতি মাসে গোরান বাজার থেকে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে এই চক্রে ছোট দুই সদস্য। সেই বার মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের মাফ করে দেয় মোবাইল মালিকরা।
চুরির কাজে কমবয়সী মেয়েদের ব্যবহার:
চোর চক্রের মূলহোতা শাহানা ও নিলুফা অপেক্ষাকৃত কমবয়সী; অপর দুই সদস্য রুমা ও মোহনাকে ব্যবহার করে। তারা দু’জন মিলে কোন বাসায় বা প্রতিষ্ঠানে চুরি করবে সেটা নির্ধারণ করে। পরে কমবয়সী দুই তরুণীকে দিয়ে টার্গেট মতো ব্যবহার করে।
(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এলএম/এসএ)