রসালো ফল পাকা আম খাওয়ার সঠিক সময় কখন

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৫, ০৮:৩৪

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

গ্রীষ্মকালে মধু মাসের রসালো ফল আম ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। আমের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক প্রায় সকলেরই। পাকা বা কাঁচা সব অবস্থায়ই এটি খাওয়া হয়। ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

আমের স্বাদের যে ভিন্নতা সেটি মূলত এর জাতের ওপর নির্ভরশীল। ১৫০০টিরও বেশি জাত ও ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি রয়েছে আমের এবং সবগুলো জাতই একে অপরের থেকে আলাদা। টক আর অতি মিষ্টি এবং এর মাঝখানে যত রকম স্বাদ রয়েছে সবই আমাদের আমের জাতগুলোতে রয়েছে।

 

আমাদের দেশের জনপ্রিয় জাতের আমগুলোর সুন্দর সুন্দর বাহারী নাম রয়েছে। এক নামে সারাদেশের মানুষ এদের চিনতে পারে। এসব জাতের একটা আলাদা কদর আর চাহিদা রয়েছে আমাদের কাছে। স্বাদে গন্ধে এসব জাতের কোন তুলনা হয় না। সে রকম জনপ্রিয় জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- হিমসাগর, ল্যাংড়া, খিরসাপাতি, হাড়িভাঙ্গা, কোহিতুর, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, কিষাণভোগ, অমৃতভোগ, মিসরীভোগ, কৃষ্ণভোগ, রাজভোগ, ক্ষীরপুলি, শাহী-পছন্দ, রানী-পছন্দ, দিল-পছন্দ, মির্জাপুরী, ফজলি, চসা, আশ্বিনা, বোম্বাই (মালদা), সূর্যপুরী, শ্রীধন, গোলাপ খাস, বৃন্দাবনী, দিল খোশ, কোহিনুর, চৈতালী, জাফরান, দিল খোস, দুধ কুমার, দুধসর, বাবুই ঝাঁকি, মধুচাকী, মিঠুয়া, শ্রাবণী, স্বর্ণরেখা, সুবর্ণরেখা, ক্ষীরপুলি, মল্লিকা, বেগমপসন্দ, মিয়াজাকি আম ইত্যাদি।

 

কাঁচা বা পাকা দুই ধরনের আমই শরীরের জন্য ভালো। যেসব আম পাকা না সেগুলো টক কারণ এতে অ্যাসিড বেশি এবং চিনি কম থাকে। অন্যদিকে, পাকা আম মিষ্টি হয় কারণ এতে কম অ্যাসিড এবং বেশি চিনি থাকে।

 

প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন থাকে। আম শ্বেতসারের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ২০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়। রয়েছে ১০৭ ক্যালরি, ৩ গ্রাম আঁশ, ২৪ গ্রাম শর্করা। এছাড়া এতে রয়েছে ২৫৭ মি.গ্রা. পটাসিয়াম, ০.২ মি.গ্রা ভিটামিন বি-৬।

 

এতে ১.৩ গ্রাম আয়রণ, ১৪ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১৬ মি.গ্রা. ফসফরাস, ১৬ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ০.৯ মি.গ্রা. রিভোফ্লেভিন এবং ০.০৮ মি.গ্রা. থায়ামিন থাকে। এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও বি-২। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.১ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১ ও ০.০৭ মি.গ্রা. বি-২ রয়েছে।

 

আম ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, আলফা-ক্যারোটিন এবং বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন সমৃদ্ধ। যা আপনার চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করবে। আমে থাকা পটাশিয়াম হার্ট এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও আমে রয়েছে পানি এবং ডায়েটরি ফাইবার। যা হজমের জন্য খুবই ভালো।

গ্রীষ্মের মরসুমে মানুষ আমের চমৎকার স্বাদ উপভোগ করেন। কিন্তু, আম নিয়ে প্রায়ই নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা করা হয়, এতে কি ওজন বাড়ে, এটি হজমের জন্য ভালো কি না, কখন খাবেন, কখন খাবেন না ইত্যাদি। তবে আম খাওয়ার সঠিক সময় আছে। আম খাওয়ার সময় শরীরে বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আম রাতের খাবারে খাওয়া ঠিক কি না এবং কীভাবে তা শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে জানেন কি কখন আম খাওয়ার সঠিক সময়? জেনে নিন-

 

 

দুপুর বা রাতের খাবারের পর আম খাওয়া ঠিক না। কারণ আম নিজেই পরিপূরক খাবারের কাজ করবে। দ্রুত পেট ভরাবে।

 

সকালে এবং বিকালে আম খাওয়া বেশি ভালো। এটি আপনার পুরো এক সময়ের খাবারের চাহিদা মেটাবে।

 

 

যারা ওজন কমাতে চান। তাদের আম কম খাওয়াই ভালো। তবে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ খেলে আম ওজন বাড়াতে পারে না।

 

আমে চিনির মাত্রা বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা এটি এড়িয়ে চলবেন। তবে অল্প পরিমাণ আম ডায়াবেটিস রোগীরা খেতেই পারেন। কারণ আমে থাকা অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীর ভালো রাখতে সহায়তা করবে।

 

আম জুস করে না খেয়ে টুকরো অবস্থায় খান। জুস করার ফলে আমের ফাইবার এবং পুষ্টিগুণ অনেকটাই কমে যায়।

 

 

আম রাতে খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে

একটি সাধারণ আকারের আমে প্রায় ১৫০  ক্যালরি থাকে। যদি রাতে আম খাওয়া হয়, তাহলে আপনার ক্যালরির পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। সেজন্য এটাও বলা হয় যে আম  রাতে না খেয়ে  দিনে খাওয়া উচিত।

 

শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়: যারা রাতে আম খান তাদের মনে রাখতে হবে আম শরীরের জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধির  কাজও করতে পারে। অনেক সময় একটু বেশি আম খেলে ব্রণ হওয়ার সমস্যা হয়। যাদের ত্বকে আগে থেকেই ব্রণ রয়েছে, তাদের আম খাওয়ার সময় বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত।

 

সুগার লেভেল: যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদের আম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে রাতে। আম শরীরের চিনির মাত্রা বাড়াতে কাজ করতে পারে।

 

ওজন বাড়তে পারে: আম ওজন বাড়াতেও সহায়ক বলে মনে করা হয়। দিনের বেলা আম খেলে মানুষ নড়াচড়া করে যার ফলে রাতের তুলনায় শরীরে চর্বি কম জমা হয়। আপনার ওজন যদি ইতিমধ্যেই বেড়ে যায়, তাহলে রাতে আম খেলে ওজন আরও বাড়তে পারে।

 

বদহজমের সমস্যা হতে পারে: রাতে আম খেলে বদহজমের সমস্যাও হতে পারে। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণেও এটি হতে পারে। তাই বলা হয় দুপুরের খাবারে আম খাওয়ার সেরা সময়। এর সঙ্গে, মনে রাখবেন যে আপনার খুব গরম দুপুরে  আমসত্ব বা আমপানা পান করা উচিত নয় কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

(ঢাকাটাইমস/৩১ মে/আরজেড)