আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার আরও যেসব কারণ সামনে আসছে
প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২৫, ০০:৪৬ | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫, ০১:২৩

ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৯১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের এই বিমানে থাকা ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হয়েছেন। বিমানটি আছড়ে পড়েছিল যে বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে, সেখানে ৫০ জনের বেশি মারা গেছেন।
এই মডেলের কোনো বিমানের ইতিহাসে এটিই প্রথম এ ধরনের দুর্ঘটনা। বোয়িংয়ের অত্যাধুনিক ৭৮৭ সিরিজের এই ড্রিমলাইনার ১৪ বছর আগে প্রথম আকাশে ওড়ে। এটি বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য বিমান হিসেবে খ্যাত। মাত্র ছয় সপ্তাহ আগেই নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং এই সিরিজের মাধ্যমে ১০০ কোটি যাত্রী পরিবহনের মাইলফলক উদযাপন করে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে উড্ডয়ন করে বিমানটি। কিন্তু উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পরই এর স্বয়ংক্রিয় সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞরা দৃষ্টি দিয়েছেন বিমানের ফ্ল্যাপ সিস্টেম-এর দিকে। ফ্ল্যাপ হলো বিমানের ডানার পেছনের এক্সটেনশন, যা উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় ব্যবহৃত হয়। ফ্ল্যাপ ও স্ল্যাট একসঙ্গে বিমানের ডানার পৃষ্ঠতল বাড়িয়ে তাকে আরও উত্তোলনে সহায়তা করে। সাধারণত বিমান যখন এক হাজার ফুটের ওপরে ওঠে, তখন ফ্ল্যাপ গুটিয়ে নেওয়া হয়।
বিমান বিশ্লেষক জিওফ্রে টমাস বলেন, ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত হওয়ার সময় বিমানের আন্ডারক্যারিজ (নিচের চাকা) তখনো খোলা ছিল এবং ফ্ল্যাপগুলো গুটানো ছিল। উড্ডয়নের এত তাড়াতাড়ি এই কাজগুলো হওয়া খুবই অস্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত উড্ডয়নের ১০-১৫ সেকেন্ডের মধ্যে আন্ডারক্যারিজ উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ধাপে ধাপে ফ্ল্যাপ গুটিয়ে নেওয়া হয়।
সাবেক পাইলট ও বিশ্লেষক টেরি টোজার বলেন, ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে না ফ্ল্যাপগুলো উন্মুক্ত ছিল। যদি তা না হয়ে থাকে, তবে তা উড্ডয়নের সময় প্রয়োজনীয় উত্তোলন না পাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।
সাবেক পাইলট ও যুক্তরাজ্যের বাকিংহামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মার্কো চ্যান বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি ফ্ল্যাপগুলো সঠিকভাবে না রাখা হয়, তাহলে সেটা সম্ভাব্য মানুষের ভুলের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু ভিডিওর রেজ্যুলেশন এতটাই কম যে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’
ভারতের এ ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর অনেকটা দুলতে দুলতে বিমানটি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে নিচে নামতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি বিধ্বস্ত হয়।
বিমান চলাচল বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানান, বিমানটি রানওয়ে থেকে ওড়ান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভবত পাখির আঘাত লেগেছে। তাতে পূর্ণ উড্ডয়নের জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন ছিল বিমানটি তা হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে বিমানটি আর উপরের দিকে নিতে পারেননি পাইলট।
সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর নামের এ বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রথমত মনে হচ্ছে, একাধিক পাখির ধাক্কায় দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়। উড্ডয়নটি নিখুঁত ছিল। কিন্তু ল্যান্ডিং গিয়ারটি উপরে তোলার আগেই বিমানটি নিচে নামা শুরু করে। এমনটি সাধারণত হয় যখন ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় অথবা বিমান আকাশে থাকার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিমানটিও নিয়ন্ত্রিতভাবে নিচে নেমে আসে। পাইলট মে ডে কল করেছিলেন। যার অর্থ ওই সময় জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।’
বুধবার দুপুরে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উদ্দেশে বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই এটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে করে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক। ছিলেন দুজন পাইলট আর ১০ জন ক্রু।
বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিমানবন্দরের বাইরে একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপরে আছড়ে পড়ে। এতে সেখানকার শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের অনেক হতাহত হন।
(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/মোআ)