বৃষ্টিতে নোয়াখালী পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা, নৌযান চলাচল বন্ধ
প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২৫, ১৬:২১

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বুধবার থেকে নোয়াখালীতে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এরইমধ্যে টানা বর্ষণের ফলে নোয়াখালী পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্ন এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থানায় জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, ফলে সারাদেশের সাথে নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নৌযান চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন।
এদিকে সকালে চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেলেও এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ট্রলারটি থেকে ১৮ জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলা আবহাওয়া অফিসে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সকালে নোয়াখালী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভার মাইজদী লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হাউজিং, উকিল পাড়া, মাস্টার পাড়া, ফকিরপুর, শিল্পকলা সড়ক, মাইজদী বাজার, পৌর বাজার ও জেল খানা সড়কসহ ৯টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন বাসা বাড়ির নিচতলায় পানি জমে ঘরবন্ধী হয়ে পড়েছে পৌরবাসীরা। শহরের সোনাপুর-চৌমুহনী চারলেন সড়কের দুই পাশে, ফ্ল্যাট রোড, জজকোর্ট সড়ক, আল-ফারুক স্কুল সড়ক ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়ক’সহ বেশিরভাগ সড়কে হাটুর কাছাকাছি পানি জমে রয়েছে। সড়কগুলোতে খানাখন্দ থাকায় প্রায় সড়ক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে, ঘটছে যানবাহনের দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আসা সেবা প্রত্যাশিরা পড়েছে দুর্ভোগে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও পথচারিরা ভোগান্তিতে পড়ে।
চলতি বছরে আগে থেকে বৃষ্টি দেখা দেওয়ায় গত মে মাসের শেষ থেকে এ পর্যন্ত তিন দফায় শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যদিও ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। তবে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকা, প্রয়োজনের তুলনায় ড্রেন না থাকা ও পানি নিষ্কাসনের খাল-বিলগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এভাবে টানা বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা গত বছরের চেয়ে বেশি স্থায়ী হতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
পৌরসভা লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, পৌরসভার জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিগত বছরগুলোতে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানি নিষ্কাসনের জন্য যে ড্রেনগুলো করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত না। একইসাথে যেভাবে ড্রেনগুলো করার কথা সেভাবে না করে টাকা পয়সা লুটপাট করা হয়েছে। ড্রেনগুলোর আয়তন নালার চেয়েও অনেক কম। যার ফলে একটু বৃষ্টিতে পুরো শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং যা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
আব্দুল হান্নান নামের একজন পথচারি জানান, বুধবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাইজদীর বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। বাসা বাড়িগুলোর নিচ তলায় পানি ডুকে গেছে। পৌরসভার বেশির ভাগ সড়ক আগ থেকে খানাখন্দে ভরা, বর্তমানে পানি জমে যাওয়ায় সড়ক সমান মনে হচ্ছে। গাড়ি চালকরা গর্ত বুঝতে না পারায় সকাল থেকে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া শহরের ছাগল মারা খালের বেশির ভাগ অংশ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও সেগুলো আজ পর্যন্ত উচ্ছেদ করেনি প্রশাসন।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা গাছ উপড়ে পড়েছে। সদর ও কবিরহাট উপজেলাসহ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের লাইনের ওপর পড়ায় ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেলাল আহম্মেদ খাঁন জানান, এ পৌরসভার জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। অতীতে যারা পৌরসভার দায়িত্বে ছিলেন তাদের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গত ৫ আগস্টের পর মাইজদী থেকে গাবুয়া বাজার পর্যন্ত ড্রেনটি’সহ কয়েকটি ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া শহরের ছাগলমারা খালের আবর্জনা পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।
(ঢাকা টাইমস/১৯জুন/এসএ)