দেশে নব্য ফ্যাসিবাদ আবার চেপে বসেছে: জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪৫ | প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৭

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দেশে নব্য ফ্যাসিবাদ আবার চেপে বসেছে। হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে প্রহসন চলছে।

বুধবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর আইডিইবি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল দলটি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি না পেয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। সভা শেষে একটি র‌্যালি বের হয়ে প্রেস ক্লাব গিয়ে শেষ হয়।

জিএম কাদের বলেন, যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করলাম, আবার ফ্যাসিবাদ দেখতে পাচ্ছি, আবার মনে হয় একটি মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে। সভা সমাবেশ করার অধিকার আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, অহিংসভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করব এটা আমাদের অধিকার। আমরা একটি রাজনৈতিক নিবন্ধিত দল, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার অধিকার আমাদের আইনগত অধিকার। যদি কেউ হুমকি দিয়ে থাকে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার, রাষ্ট্র সেটি পালন করছে না।

তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনুসকে সমর্থন দিয়ে মেনে নিলাম। আমরা সকলে তাকে সমর্থন দিলেও ওনি আমাদের মেনে নেননি। বিভাজন করে রাখলেন, একটি ফ্যাসিস্ট পক্ষের শক্তি, আরেকটি বৈষম্যবিরোধী। তারা ধরে নিলেন বিগত ১৬ বছর যারা নির্যাতিত হননি তারা ফ্যাসিস্ট শক্তির দোসর। এভাবে এক ভাগকে আরেক ভাগের উপর স্থাপন করলেন। যাদের দোসর আখ্যায়িত করা হলো তাদের বিনাবিচারে নির্যাতন, তাদের হয়রানি করা, মামলা দেওয়া, তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যের নামে নিবন্ধিত ৪৮ দলের মধ্যে ১৮টি দলকে বৈঠকে ডাকলেন, ৩০টি দলকে বাদ দিলেন। প্রায় ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠিকে বাইরে রেখে ঐক্য হয় না। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতার করার পরও ডাকা হলো না। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জাতীয় পার্টির গণতান্ত্রিক অধিকার বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, সভা সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ৩ মাস ধরে আরেকজন নেতাকে মিথ্যা হত্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার অনাচার করা হচ্ছে। আমরা এটাকে ফ্যাসিবাদ দেখছি। নব্য ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আমার মনে হয় আরেকটি আন্দোলন ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, বলা হচ্ছে আগে আমরা হত্যার বিচার করব তারপর নির্বাচন। দেশে হত্যার বিচারের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। তারা যাদেরকে দোসর মনে করছে তার নামেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয় ১০ জন দোষী ছাড়া পেয়ে গেলেও ১ জন নির্দোষ লোক যেনো সাজা না পায়। আমরা দেখছি উল্টো। প্রতিহিংসার আগুন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো হচ্ছে। আশঙ্কা হয়, প্রতিপক্ষকে নির্মূল করাই সমাধান, তাহলে কি ৫০ ভাগ লোককে নিশ্চিহ্ন করা হবে, তাদেরকে যেনোতেনো ভাবে ফাঁসি দেওয়া হবে। পাকিস্তান চেয়েছিল, তারা পারেনি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত শত্রুতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব বিচার করতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে, হত্যার বিচার বলে কালক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবাইকে নিয়ে বসে দেশ পরিচালনা করা হবে অন্তবর্তীকালীন সরকার। কিন্তু বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দেশে কোনো সরকার ক্ষমতা ছেড়ে যেতে চায় না, এর অন্যতম কারণ কোনো সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, আমি মনে করি কেউই নিরাপদ নই, কে কখন কীভাবে ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে যাবেন, বলতে পারবেন না। যেভাবে দেশকে বিভক্ত করেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন করা আপনাদের পক্ষে কতটা সম্ভব প্রশ্ন রয়েছে। আপনারা সংস্কার দিতে সক্ষম হবেন না। সংস্কার করতে গেলে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।

পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। সভা করার জন্য ডিএমপির কাছে আবেদন দিয়েছিলাম, মৌখিকভাবে অনুমতি দেয়, নিয়ম মেনে সভা করতে চেয়েছিলাম। পরে অনুমতি বাতিল করা হয়, কী কারণে সভা করতে দেওয়া হলো না, আমরা জানতে পারিনি। ১ হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। তারই ফল আজকের সরকার, কিন্তু আমরা কেনো এই কর্মসূচি করতে দেওয়া হলো না।

কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এই পতাকা থাকত না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। যার যে অবদান তা স্বীকার করতে হবে। অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি ৩২ বছর ধরে বৈষম্যের শিকার, যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে তারা নির্যাতন করেছে, দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির মামলা উঠে যায়, আমাদের মামলা রয়ে গেছে। জাতীয় পার্টি কখনও মাথা নত করেনাই, যে ধরনের পরিস্থিতি হোক জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে।

তিনি বলেন, আস্তে চলা ভালো আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ব্যক্তি জীবনে আপনার সম্পর্কে জানি। আমি আশা করি আপনার সুনাম আপনি ধরে রাখবেন। এমন কিছু করবেন না যাতে আপনার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।

ঢাকাটাইমস/০১জানুয়ারি/জেবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

সিঙ্গাপুরে সামিট চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে: কাজী মামুন

এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন উপদেষ্টা: ইশরাক

বাংলাদেশের ফুটবলে সহযোগিতায় আগ্রহী ব্রাজিল, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রদূত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বয়কট জামায়াতের

তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সন্তোষ

দ্বিতীয় ধাপে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা আজ

‘তথ‍্য আপা’ প্রকল্পের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংহতি প্রকাশ

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পেতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন: ফখরুল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :