নিরক্ষর ব্যক্তিকে প্রতারণা করে কোটি টাকার জমি লিখে নিয়েছেন ইউপি সদস্য!

সিলেটের কানাইঘাটে একজন নিরক্ষর মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে কোটি টাকার জমি প্রতারণা করে লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাহাবুদ্দিন নামে এক ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে। উপজেলার দিঘীরপাড় ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই সদস্যের বিরুদ্ধে কানাইঘাটের ৫ নম্বর আমলী আদালত ও সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন জমির মালিক বুরহান উদ্দিন।
জানা গেছে, ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিনের এই প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করেন কানাইঘাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক ফয়জুর রহমান। কম দামি ১ একর ৪৯ শতক জমির সঙ্গে আরও ১ একর ১৭ শতক দামি জমি প্রতারণা করে দলিল করে নেন ইউপি সদস্য।
এই ঘটনায় স্থানীয় সালিশে শাহাবুদ্দিন জমি বেশি লিখে নেওয়ার কথা স্বীকার করে তা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তবে একাধিক সালিশের পরও তা আর ফেরত দেননি।
আদালতে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টাকার বিশেষ প্রয়োজন হলে জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন বুরহান উদ্দিন। এই খবর পেয়ে একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ৩ নম্বর দিঘিরপাড় ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহাবুদ্দিন জমি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে তিনি তার মনোনীত দলিল লেখক ফয়জুর রহমান ও রহুল আমীনসহ বোরহান উদ্দিনের সাথে জমি ক্রয়সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন।
সবকিছু সঠিক থাকায় শাহাবুদ্দিন জমি কিনতে রাজি হন। আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন দাগ নম্বরে মোট ১ একর ৪৯ শতক জমির মূল্য ৯ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়। জমি রেজিস্ট্রি করার তারিখে দলিল লেখক ফয়জুর রহমান, রুহুল আমিন, ও সায়মনের মাধ্যমে শাহাবুদ্দিন টাকা বুঝিয়ে দেন শাহাবুদ্দিন। গত বছরের ৬ জুন জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়।
ভুক্তভোগী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমি একজন গ্রামের সহজসরল লেখাপড়া না জানা সাধারণ কৃষক মানুষ। মেম্বার শাহাবুদ্দিন আমার কানাইঘাট থানা জে,এল, নং-১৮৯ মানিকপুর মৌজা-৫৪০,৫০২,৫৪৩,৫৫৮,৫৫৯,৫৫৪,৬২৯,৬৩৪, ও ৫৩৭ দাগ নম্বরে মোট ১ একর ৪৯ শতক জমি কেনেন। জমি রেজিস্ট্রির আগে দলিল লেখক ফয়জুর রহমান কাগজপত্র ঠিক আছে বলে আমার কাছ থেকে তাড়াহুড়ো করে স্বাক্ষর নেন। দলিল সম্পর্কে ও কত শতাংশ লিখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন যা কথা হয়েছে তা দলিলে লেখা হয়েছে। আমি নিরক্ষর মানুষ স্বাক্ষর ছাড়া কিছু জানি না।’
গত বছরের ২০ নভেম্বর সকালে সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে একই মৌজার খতিয়ান ৫৫৩ হাল জরিপি ৬০৯ এর ৫৬, ৫৭ ও ৫৮ দাগের কোটি টাকা দামের জমিতে মাটি ভরাটের খবর পান বুরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘উপজেলার ধনমাইরমাটি ও দক্ষিণ খাসারীপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুর ও আব্দুল মুতলিব ওই জমিতে মাটি ভরাট করতে আসলে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় শাহাবুদ্দিন তাদের কাছে জমি বিক্রি করেছে। এবং আমি নাকি শাহাবুদ্দিনের কাছে জমি বিক্রি করেছি। বিষয়টি শুনে আমি হতবাক হই এবং তাদের মাটি না ভরাট করার জন্য অনুরোধ জানাই।’
পরে বুরহান উদ্দিন দলিলের সার্টিফাইড কপি তুলে জানতে পারেন তার বিক্রীত ১ একর ৪৯ শতক জমির দলিল সম্পাদনের সময় প্রতারণা করে আরও ১১৭ শতক ৫০ পয়েন্ট জমি অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২ একর ৬৬ শতক ৫০ পয়েন্ট জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন শাহাবুদ্দিন।
জানা যায়, গত বছরের ৪ নভেম্বর এলাকাবাসী দুই পক্ষকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসে। সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয় শাহাবুদ্দিন প্রতারণা করে বেশি জমি লিখে নিয়েছেন। অবিলম্বে তাকে জমি ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয় সালিশ।
বুরহান উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘জমি ফেরত না দিয়ে শাহাবুদ্দিন বিভিন্নভাবে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পরবর্তীতে বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনকে জানাই। তাদের পরামর্শে ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিন, দলিল লেখক ও শনাক্তকারীসহ চারজনের নামে আদালতে মামলা ও জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযোগ করি। আশা করি আমি ন্যায়বিচার পাব।’
সালিশ বৈঠকের মুরব্বি মাস্টার সালেহ আহমদ জানান, বুরহান উদ্দিন ও শাহাবুদ্দিনের জমিসংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকটি সালিশ বৈঠক হয়। শাহাবুদ্দিন বৈঠকে স্বীকার করেন ভুলবশত ৫৬, ৫৭, ৫৮ দাগের জমি দলিল হয়ে তার নামে এসেছে। তিনি তা বুরহান উদ্দিনকে ফেরত দেবেন। কিন্তু পরে তিনি জমি ফেরত দেননি।’
শাহাবুদ্দিনের প্রতারণার শিকার আরেক ভুক্তভোগী ইউনিয়নের প্রবীণ মুরব্বি আব্দুল হাই বলেন, ‘দুই বছর আগে শাহাবুদ্দিন প্রতারণা করে আমার ১৫ শতক জমি দলিল করে নেয়। পরে এলাকাবাসীকে নিয়ে অনেক সালিশ করে জমি ফেরত পাই। একই ভাবে বুরহান উদ্দিনের সাথে প্রতারণা করে জমি দলিল করে নিয়েছে শাহাবুদ্দিন। শালিশ বৈঠকে সে তা স্বীকার করেছে। সুষ্ঠু তদন্তর মাধ্যমে বুরহান উদ্দিনের জমি ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দাবি জানাই।’
ঘটনার বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিনের সাথে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল জানান, তারা এই বিষয়ে অবগত হয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
এই বিষয়ে দিঘিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী বলেন, বুরহান উদ্দিন বিষয়টি আমাকে এক বছর আগে জানিয়েছেন। তখন আমি চিকিৎসা নিতে ভারতে গিয়েছিলাম। দেশে আসার পর শাহাবুদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।’
(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/মোআ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

কুমিল্লায় ডেঙ্গুতে তিন নারীর মৃত্যু

ময়মনসিংহে হাতেম সরকার স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে ঈদ আনন্দ মেলা

বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই

শ্রীপুরে বুথে ধর্ষণের ঘটনায় আসামি লিটন গ্রেপ্তার

সুন্দরবনে দুই বনদস্যু আটক

কুমিল্লায় সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট অচল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী

ভৈরবে আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন

চলতি বছরে বরিশালে প্রথমবারের মতো করোনা শনাক্ত

ঝিনাইদহে ছেলের হাতে বাবা খুন
