যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা দেশে ভাষাশহীদদের স্মরণ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৫৮

ভাষাশহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। ‘অমর একুশে’ উপলক্ষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।

শুক্রবার ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোর থেকেই কালো ও সাদা পোশাক পরিহিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ খালি পায়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে গেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদি।

এছাড়া সারা দেশের জেলা ও উপজেলাগুলোতে শহীদ মিনারে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষাথী, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানান।

ইউনেস্কো প্রযুক্তিগত সংলাপ, উচ্চস্তরের অধিবেশন, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, লাইভ স্ট্রিমিং এবং ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈচিত্র্যকে সম্মান জানাতে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে দুই দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদদের প্রতি প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, কলা অনুষদের ডিন ড. সিদ্দিকুর রহমান খান, ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, বিজ্ঞান অনুষদ ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে পর্যায়ক্রমে স্বাগত জানান।

প্রধান উপদেষ্টার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কূটনীতিক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান হাসান মাহমুদ খান, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ ধারাবাহিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে ডিজিএফআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. ফয়জুর রহমান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক একেএম শহীদুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সারওয়ার ফরিদ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের পক্ষে ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এদিকে ঢাবি উপাচার্য এবং অন্যান্য সংস্থা ঢাবি পরিবারের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (জেসিডি), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, সাম্যবাদী দল, গণফোরাম, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট এবং ছাত্র ফেডারেশন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পরে এলাকাটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এদিকে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ এ আন্দোলন বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য সূচিত হলেও এর মূল চেতনাটি ছিল স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তা ছিল বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন, তাই বাঙালির কাছে একুশ মানে মাথানত না করার দৃঢ় প্রত্যয়। বায়ান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারি তাই শুধু বেদনার্ত অতীতকে স্মরণ করে অশ্রু বিসর্জনের দিন নয়, বরং এক অবিনাশী প্রেরণা, সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্র।

তিনি বলেন, যারা আজ পদক পেয়েছেন তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য যারা অলিম্পিয়াডে পুরস্কার পেয়েছ তাদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি এনে দিতে আমাদের অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মাতৃভাষার চেতনা ও মর্যাদা রক্ষার প্রেরণা ও এ চেতনার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকতার সূত্রে ২০০১ সালের ১৫ মার্চ ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। বিশ্বের সব মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণার ইতিবৃত্তকে লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করে।

তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা যেকোনো নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষার সঙ্গে সকল মানুষের আত্মার সম্পর্ক। মাতৃভাষার পর মানুষ যত ভাষাই আত্মস্থ করুক না কেন, সেসব নতুন ভাষায় যতই পারদর্শিতা অর্জনই করুক না কেন, মাতৃভাষাকে তার হৃদয়ের গভীরতা থেকে সরাতে পারে না।’

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :