মশা মারার যন্ত্র বানিয়ে তাক লাগালেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান থিংক ল্যাবস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ মে ২০২৫, ১১:২৪

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরজীবন। রাজধানী ঢাকায় নির্দিষ্ট একটি সময়ে মশার উপদ্রব বেশি থাকতো, এখন তা বছরজুড়ে। দিন যায় কিন্তু মশা কমে না বরং প্রতিদিন বাড়ছে মশার যন্ত্রণা। শত শত কোটি টাকা মশা নিধনে ব্যয় দেখানো হলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম কখনোই খুব শক্তিশালী দেখা যায়নি। অধিকাংশ সময় নগরবাসী ব্যর্থতাই দেখেছে। মশা নিয়ন্ত্রণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এর সুফল নগরবাসী পায় না। অনেক কার্যক্রম নিলেও তা কদিন না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। মশার কামড় খাওয়া এবং অসুস্থ হয়ে ভোগাই যেন নগরবাসীর নিয়তি। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিনে দিনে। বর্তমানে ডেঙ্গুর ধরন বদলে গিয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের রোগের তীব্রতা, জটিলতা এবং মৃত্যুর হার এবার সবচেয়ে বেশি।

মশার হাত থেকে সুরক্ষার জন্য কয়েল, স্প্রে, অয়েন্টমেন্ট প্রভৃতি উপকরণ রয়েছে। আবার বড় আকারে বিস্তার ঠেকাতে রয়েছে ফগার মেশিনের ব্যবহার। প্রায় সব কটি পদ্ধতিতেই রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার হয়, যা মানবশরীর ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

তবে রাসায়নিক বা কীটনাশকযুক্ত ওষুধের পরিবর্তে মশা নিধনে নতুন একটি যন্ত্র বানিয়েছে থিংক ল্যাবস নামের বাংলাদেশি এক প্রতিষ্ঠান। যন্ত্রটি বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারখানা, বিপণিবিতানসহ যেকোনো খোলা জায়গায় স্থাপন করা যায়। যন্ত্রটি স্থাপনের দুই সপ্তাহের মধ্যেই ওই এলাকায় পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে এবং তিন মাসের মধ্যে মশার প্রজনন উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসার প্রমাণ মিলেছে।

মশার মেশিন ছাড়াও প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান নিয়ে আরও কিছু যন্ত্র বানায় থিংক ল্যাবস। মাত্র ২০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে এখন পর্যন্ত চার কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ করা হয়েছে। গত বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন ৪১ জন কর্মী।

থিংক ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আশিকুর রহমান তানিম। বর্তমানে থিংক ল্যাবসে তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন মালিকানা অংশীদার রয়েছেন। তানিম ২০০৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যান। পড়ালেখা শেষে সেখানেই কয়েক বছর তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করেন। তবে বাংলাদেশে ফিরে কিছু করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। সেই চিন্তা থেকেই গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতে বিনিয়োগ নিয়ে ২০১৯ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর প্রতিষ্ঠা করেন ‘থিংক’ নামের প্রতিষ্ঠানটি। নিয়োগ দেন একদল তরুণ বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও গবেষক। এই থিংক ল্যাবসেরই নিজস্ব আবিষ্কার ‘মশার মেশিন’। যেটি এখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হয়েছে।

আশিকুর তানিম জানান, মূলত নিশ্বাসের মাধ্যমে বের হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অনুসরণ করে প্রাণীদেহের কাছে পৌঁছায় মশা। এ কারণে থিংক ল্যাবের উদ্ভাবিত মশার মেশিনের একেবারে নিচে একটি ‘ট্র্যাপ’ চেম্বার রয়েছে। তার ঠিক ওপরে বিশেষ প্রলেপ দেওয়া সাকশন ফ্যান (যা বস্তুকণা নিজের দিকে টেনে নেয়) এবং তার ওপরে একটি বিশেষ লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। মেশিনটি চালুর পর ফ্যানটি ঘুরতে থাকে। তখন প্রলেপটির সঙ্গে লাইটের আলোর একটি ফটোক্যাটালিটিক প্রক্রিয়া তৈরি হয়, যা মশার জন্য একটি শক্তিশালী ফাঁদ তৈরি করে।

মশা সাধারণত ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে নিজ থেকে উড়তে পারে না। স্ত্রী মশা যখন নির্দিষ্ট দূরত্বে চলে আসে, তখন যন্ত্রটির মাধ্যমে তৈরি হওয়া মানুষের মতো কৃত্রিম নিশ্বাসে আকৃষ্ট হয় ও ফাঁদে আটকা পড়ে। কোনো মশা যন্ত্রটির প্রবেশপথে একবার ঢুকে গেলে সাকশন ফ্যানের কারণে সেগুলো আর বের হতে পারে না এবং সরাসরি ট্র্যাপ চেম্বারে গিয়ে আটকে যায়। সেখানে ডিহাইড্রেড (পানিশূন্যতায়) হয়ে একপর্যায়ে মারা যায়। যন্ত্রটি ভবনের অভ্যন্তরে, প্রবেশদ্বার বা যেকোনো খোলা জায়গায় যেখানে মশার উপস্থিতি বেশি, সেখানে স্থাপন করা যায়।

থিংক ল্যাবসের তৈরি তিন ধরনের মশার মেশিন। বড় ও মাঝারি আকারের যন্ত্রটি ঘরের বাইরে যে কোনো উন্মুক্ত স্থানে বসানো যায়। তৃতীয় ও ছোট আকারের যন্ত্রটি বহনযোগ্য, অর্থাৎ ঘরের মধ্যেও এটি ব্যবহার করা যায়।

ঢাকার উত্তরা, মিরপুর, গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী, সাভারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও খোলা জায়গায় থিংক ল্যাবসের এই মশা মারার যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেটসহ বেশ কয়েকটি জেলায় গ্রাহকেরা যন্ত্রটি কিনে বসিয়েছেন। বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, সেনানিবাস, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঁচ তারকা হোটেলেও মশা নিধনে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছে।

যন্ত্রটি ২৪ ঘণ্টাই চালু রাখতে হয়। তবে এতে বিদ্যুৎ খরচ খুব কম। পুরোপুরি মেটাল কাঠামোতে বানানো যন্ত্রটি ঝড়বৃষ্টিসহ নানা ধরনের ঝুঁকি থেকেও মুক্ত। অত্যধিক ওজনের কারণে কারও পক্ষে এটি চুরি করে নেওয়াও কষ্টকর। তা ছাড়া কিছু মডেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক সেন্সর লাগানো রয়েছে। সব মিলিয়ে এই যন্ত্রটি পাঁচ বছরের বেশি সময় স্থায়ী হবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

যন্ত্রটি তিনটি আকারে পাওয়া যায়। আকারভেদে দাম ৩১ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

(ঢাকাটাইমস/১২ মে/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

গুলশানে রাজউকের ৫ কোটির ‘রূপসা অ্যাপার্টমেন্ট’ কারা নিয়েছে, নাম জানুন

কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি সারোয়ার জাহান ঢাকায় গ্রেপ্তার

ডিএমপির দুই থানায় নতুন ওসি

মেয়রের ভূমিকায় ইশরাক হোসেন, নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে বৈঠক

ঢাবিতে ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার, কারা রাখল এসব বিস্ফোরক?

নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল থেকে ব্যাংক কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

হঠাৎ উত্তপ্ত প্রেসক্লাব, পুলিশের লাঠিচার্জ- সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

মাদকদ্রব্যের উপ-পরিচালক শামীম আহম্মেদের অপসারণ চেয়ে মশাল মিছিল

উত্তরায় নিরাপত্তা কর্মীর মরদেহ উদ্ধার

ফুটপাতে পড়েছিল অজ্ঞাত নারী, হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করলেন চিকিৎসক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :