পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা, ক্ষতির মুখে এক কোটির বেশি শিশু

আজ থেকে তিন দফা দাবি আদায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন। অর্থাৎ শিক্ষকরা ঠিকই স্কুলে আসবেন কিন্তু তারা কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবেন না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি সহকারী শিক্ষকনির্ভর হওয়ায় আন্দোলনের কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এক কোটিরও বেশি শিশু শিক্ষার্থী।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে গতকাল রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ছয়টি সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ।’
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হচ্ছে—প্রাথমিক শিক্ষাসংক্রান্ত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে অ্যান্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ। ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন। প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।
জানা যায়, দাবি আদায়ে গত ৫ মে থেকে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা প্রতিদিন এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছেন। ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন।
গত ২১ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। আর আজ সোমবার থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে চার লাখেরও বেশি শিক্ষক কর্মরত। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখই সহকারী শিক্ষক।
বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে, আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম। এরই মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নতুন এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকদের শুরুর বেতন গ্রেড ১২তম এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড হবে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এবং আদালতের রায়ের আলোকে এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে সরকারের এ উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলনে নামেন। তাঁদের দাবি, ১২তম গ্রেড নয়, শুরুর বেতন ধরতে হবে ১১তম গ্রেডে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিসংখ্যান ২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৫। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ১ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৫৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী আগামী ৩ জুন ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে। এর আগ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছয় কার্যদিবস শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকার কথা। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের জেরে এ সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হতে যাচ্ছে।
অভিভাবকরা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারি বিদ্যালয়ের তুলনায় ছুটি বেশি। এ কারণে এরই মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে আছে। সামনে ঈদুল আজহার ছুটি রয়েছে। এর আগে শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে ক্লাস বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি আরো বাড়বে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর গত এক বছরের ছুটির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জুন থেকে চলতি বছর মে পর্যন্ত শুক্র-শনি ব্যতীত ৯৩ দিন ছুটি ছিল।
(ঢাকাটাইমস/২৬ মে/আরজেড)
সংবাদটি শেয়ার করুন
শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষা এর সর্বশেষ

এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাউশির জরুরি স্বাস্থ্য নির্দেশনা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি স্বাস্থ্য নির্দেশনা

এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে যে নির্দেশনা দিলো শিক্ষা বোর্ড

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অনিয়ম ও দুর্নীতি: প্রতিবাদে রাস্তায় নামছে শিক্ষার্থীরা

১৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি

১৩ জুলাইয়ের মধ্যে এসএসসির ফল প্রকাশ

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং এইমস হাসপাতালের মধ্যে সমঝোতা স্মারক

জবিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদুল আজহা উপলক্ষে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন শিবিরের
