‘আগে বিচার হবে, সংস্কার হবে, এরপরে নির্বাচন’

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, অবিলম্বে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলিউশন’ ঘোষণা সরকারকে দিতেই হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ঠিক সেইভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে হবে। আগে বিচার হবে সংস্কার হবে এরপরে নির্বাচন। তার আগে কোনোভাবেই নির্বাচন দেয়া যাবে না।
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ এবং ‘প্রোক্লামেশন অব জুলাই’ রেগুলেশন এর জন-আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে এক ছাত্র সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।
ফরিদপুর শহরের রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গত দেড় দশক ধরে খুনি হাসিনা আমাদের দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে। আমাদের দেশটাকে নেতৃত্ব শূন্যতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমাদের পূর্বতন যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব রয়েছে তাদের বিভাজনের কারণে তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, ঠিক সেই জায়গাতেই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে হাল ধরতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আগস্টের ৬ তারিখের পর আজ পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান বিচার আমরা দেখতে পাইনি। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার হয় নাই। ২০১৪ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার হয় নাই। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে যেভাবে নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে সেগুলির এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয় নাই। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের কাজকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই এই বিচারগুলিকে সম্পন্ন করতে হবে।
হাসনাত বলেন, এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা দেখি নানা বিদ্রোহ করা হয় সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়। আপনাদেরকে বলি- আপনারা রিয়েলিটি মাইনা নেন। ছাত্রসমাজ জেগে আছে ততদিন এই খুনি শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবে না।
ঢাকার মসনদে কে বসবে সেটি আগে দিল্লি থেকে নির্ধারণ করা হতো। এখন আর দিল্লী নয়, এদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে ঢাকার মসনদে কে বসবে উল্লেখ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বিগত সরকার তার নথযাত্রা যে কারণে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার চাযয়নি।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম যারা ক্ষমতার লোভে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের রক্ত ও জীবনকে বিদ্দুমাত্র মূল্য দেয় না তাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না বাংলাদেশের মানুষ। এই দেশের মানুষের জীবনের দিকে আর যদি কোনো শকুন দৃষ্টি দেয় তাহলে তার চোখ উপড়ে ফেলব। হোক সে দেশের ভেতরের শক্তি অথবা বাইরে শক্তি। আমরা আমাদের শহীদ ভাইদের হত্যার বিচার চাই।
‘শেখ হাসিনা দেশে আসবে, তবে সে দেশে এসে সরাসরি ওই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে, এসে সরাসরি ওই কাঠগড়া থেকে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের অবশ্যই একটি যৌক্তিক সময় নির্বাচন হবে। তবে তার পূর্বে এই খুনি হাসিনা আমাদের এই দেশের সিস্টেম গুলোকে যেই ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই সিস্টেমগুলোকে সংস্কার করতে হবে। আমাদের এই বাংলাদেশ আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা চোখে চোখ রেখে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করব। পৃথিবীর কোনো বহিঃশক্তি যদি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের চেষ্টা করে তাহলে আমরা সেই পররাষ্ট্রনীতি ছুঁড়ে ফেলব।’
তিনি বলেন, আমরা একটি জুলাই অভ্যূত্থানের ঘোষণাপত্র দিয়েছি। সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জুলাই অভ্যূত্থানের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি সংবিধানের লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। সেই ঘোষণাপত্রে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় ছাত্র সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সোহেল রানা। অন্যানের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন হাসিব-আল ইসলাম, রিফাত রশীদ, আশরেফা, রাজেন্দ্র কলেজ শাখার প্রধান কাজী রিয়াজ, ফারহান আহসান অর্ণব, নাবিলা তালুকদার, তাহসিন হাসান দ্বীন, মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদ, সানজিদা রহমান সমতা, জেবা তাহসিন, শাহ মো. আরাফাত প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় ফরিদপুরে বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী লেলেজা সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এই সব সশস্ত্র হামলার সাথে জড়িত অপরাধীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনো অনেকে আমাদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আন্দোলনে আহত অনেকে পারিবারিক কারণে থানায় মামলা করতে পারেনি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আন্দোলনের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
তারা বলেন, এই দেশে আর মুজিববাদ ফিরে আসবে না।
সমাবেশ শুরুর পর মঞ্চ থেকে নেমে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের ৮ জন শহীদ ও আহতদের এসে খোঁজখবর নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সাজিদ আলমসহ অন্যান্য কেন্দ্র নেতৃবৃন্দ।
ছাত্র সমাবেশ উপলক্ষেহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সমর্থকরা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও প্লাকার্ড নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে যোগ দেয়।
ঢাকাটাইমস/০৬জানুয়ারি/ইএস
সংবাদটি শেয়ার করুন
বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

চাঁদপুরে মাদকসহ ৪ কারবারি গ্রেপ্তার

আ.লীগ নেতার স্বজনদের নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চেষ্টা, অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে হাজতির মৃত্যু

সুনামগঞ্জে ভারতীয় শাড়ি-লেহেঙ্গা জব্দ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হত্যা মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন

টঙ্গী মাজার বস্তিতে সেনাবাহিনীর অভিযান, আটক ২৫

গাজীপুরে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে মা-ছেলেসহ নিহত ৩

মানিকগঞ্জে ডিআইজির উপস্থিতিতে অপরাধ পর্যালোচনা ও কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত

লোহাগাড়ায় অস্ত্রসহ ডাকাত দলের সদস্য আটক
