সরকার তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করলে যৌক্তিক হবে না: মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, “এই সরকার তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করলে এটা যৌক্তিক হবে না। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে শুরুতেই বলা হয়েছিল।”

সোমবার রাজধানীর মোমেনবাগে ডেমোক্রেসি অডিটোরিয়ামে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস, ছাত্র-জনতা এখন কোথায়?’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে দি মিলিনিয়াম ইউনিভার্সিটি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঈন খান বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য দেশের লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। সর্বশেষ ২৪ এর আন্দোলনে যে নতুন সূর্যোদয় হয়েছে তা কোনোদিন আমরা অস্তমিত হতে দিতে পারি না।”

তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্ট আমরা যে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করেছি এখন ছয় মাস পরে এসে সে আনন্দ উপভোগ করতে পারছি না।”

“আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, আমরা সবাই এটা চেয়েছিলাম। আজ কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো?” এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়াকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “৫ ফেব্রুয়ারিতে যা ঘটলো আমার কাছে এক রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে জানতে চাইলেন। আমি বলেছি, এর বীজ বপন হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ভেঙে দেওয়ার পর। তবে আমরা বলেছি, প্রতিহিংসার রাজনীতি আমরা বিশ্বাস করি না।”

বাংলাদেশে সরকার চালানো ইংল্যান্ড, আমেরিকার সরকার চালানোর চেয়েও কঠিন বলেও মন্তব্য করেন মঈন খান।

অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “সরকারের হাতে সংস্কার এবং নির্বাচন। এই দায়িত্ব থেকে ব্যর্থ হলে আমাদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা নয়। আমরা নতুন কিছুর জন্য চেষ্টা করবো।”

তিনি বলেন, “এই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।”

সাকি আরও বলেন, “বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো কিছু করেনি এমন একটা ন্যারেটিভ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। করতেই পারে। রাজনৈতিক দল করলে তাদের একটা উদ্দেশ্য থাকে। নতুন পার্টি যে কেউ করতে পারে। স্বাগত জানাই। ক্ষমতার ছায়াতলে থেকে পার্টি করলে দেশের মানুষ ভালোভাবে নেবে না।”

বিএনপি নেত্রী এবং সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, “হাসিনা চলে যাওয়ার পর মনে হলো এখন বুঝি সুখ আর সুখ। হাসিনা একাই চলে গেল কিন্তু তার সমস্ত চরিত্র বহমান।”

তিনি বলেন, “এত দিন যারা আন্দোলনে ছিলেন তাদের এখন শুনতে হয় চাঁদাবাজ অপবাদ।”

তিনি আরও বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয়।”

বৈঠকে অংশ নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ডেভিল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বড় ডেভিলদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন ছিঁচকে ডেভিলদের খুঁজছে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে গণফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিন। জাতিকে মুক্ত করুন।”

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো হাসিনার পতন চায়নি, এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা।”

তিনি বলেন, “ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করবে, ভালো কথা। কিন্তু এটা যেন কিংস পার্টি না হয়ে যায়। তাহলে রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই অভ্যুত্থানে সবার অংশগ্রহণ আছে। এখানে কাউকে বড় কাউকে ছোট করা যাবে না।”

রাশেদ বলেন, “সরকারের উচিত হবে কিংস পার্টিকে সহযোগিতা না করা। অন্যথায় ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের পরিণতি হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, “যারা দায়িত্বে আছে তারা নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন।”

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার ও সাংবাদিক আকবর হোসেন মজুমদার বলেন, “ফ্যাসিস্ট এবং ফ্যাসিস্টের দোসর ফিরে আসুক এটা কেউ চায় না। এমন কিছু জায়গায় সবাই একমত। সুতরাং ডেমোক্রেসি, লিবারেল, উদারপন্থি, সহনশীল সমাজ লাগবে। এর কোনো বিকল্প নেই।”

অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, “গত ছয় মাস সময়টা খারাপ ছিল। তবে ব্যাংকিং সেক্টরে উন্নতি আসছে।”

তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে আর রাজনীতিকরা করবে রাজনীতি।”

আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, “আমি আকবর হোসেনের বক্তব্য থেকে চার বিষয় নোট করেছি, ডেমোক্রেটিক, লিবারেল, উদারপন্থি, সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা। আমরা এটাই চাই।”

বৈঠক সঞ্চালনা করেন দি মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিজ বোর্ডের চেয়ারপাসন অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকার। স্বাগত বক্তব্য দেন দি মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অভিনয় চন্দ্র সাহা।

বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক মঞ্জরুল আলম পান্না, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এম রাজীবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/জেবি/এফএ)