খুলনায় সংবাদ সম্মেলন
কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদলকে জড়ানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, হামলা-উস্কানিতে জড়িতদের শাস্তি দাবি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) মঙ্গলবারের ঘটনার সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া। তিনি বলেছেন, কুয়েটে ছাত্রদলের কোনো সাংগঠনিক কমিটি কিংবা তৎপরতা নেই। বরং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্র শিবির পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানোর জন্য ছাত্রদলের নাম জড়িয়েছে।
মঙ্গলবারের ঘটনাকে চরম অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত হিসেবে বর্ণনা করে তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং হামলা ও উস্কানিতে যেই জড়িত থাকুক, সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
কুয়েটে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন ছাত্রদল নেতা।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, যেখানে ছাত্রদলের কোনো তৎপরতা নেই এমনকি নিবন্ধিত সদস্যও নেই, সেখানে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠে কীভাবে?
আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিওর সূত্রে দাবি করেন, সাধারণ ছাত্রের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল থেকে দু-তিনজন নেতার উস্কানিতে ঘটনার সূত্রপাত হয়, যা পরে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের রূপ নেয়।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশে আমরা পদার্পণ করেছি। ছাত্রদল সব সময় জুলাই-আগস্টের স্পিরিট ধারণ করে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করতে চায়। আমরা একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ চাই। যেখানে সব দলের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে।’
ছাত্রলীগের মতো একটি দলই রাজনীতি করবে বাকিদের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না, এমন হলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, সেই শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলন ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম বলেন, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। তারা কুয়েটে নিজেদের কার্যক্রম চালু রেখে কোন মুখে দাবি করে তারা এখানে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে দেবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্যাডে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত কুয়েটের ৭৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে বলে জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, মঙ্গলবার কুয়েটের চরম অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনার প্রেক্ষিতে অনলাইনে ও অফলাইনে অপপ্রচারের মাধ্যমে সত্য ঘটনাকে চাপা দিয়ে ছাত্রদলের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
বাস্তব প্রেক্ষাপটে তাদের সংগঠনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করা অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ও ছবি/ ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, গতকালকের (মঙ্গলবার) অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ (২০২১-২২ সেশন), ইফাজ (২০২২-২৩ সেশন) ও ইউসুফ (২০২২-২৩ সেশন) নামের তিনজন কর্তৃক ছাত্রদলের সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে।
‘ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী, তাদের ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। এর জবাবে ওই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের ওপর।’
ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘সেই সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নন।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, ‘যেহেতু কুয়েটে ছাত্রদলের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি, এবং এখনও পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা (ভুক্তভোগী) তিনজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদের কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনাকে ‘ছাত্রদলের হামলা’ হিসেবে প্রচার করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারের পেছনে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারক-বাহক ইসলামি ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা এবং ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে মব মিছিলের পূর্বে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিশাল ব্যানার টানানো হয় এবং মিছিল থেকে বিনা উস্কানিতে ছাত্রদলের তিন সমর্থকের ওপরে হামলা চালানো হয়।’
এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরবর্তীতে কোনো রূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সাথে কুয়েট শিক্ষার্থীদের সহিংসতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ছাত্রদলের হামলা’ বলে পুরো ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয় বলে দাবি করেন আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া ।
ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে বর্তমানে ফ্যাসিবাদ ও দখলদারিত্বের চর্চা যখন অসম্ভব, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশ ধরে নিষিদ্ধ সংগঠন শিবির ও ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করে ক্যাম্পাসসমূহে নিজেদের দখলদারি জারি রাখার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, সাফি ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহেদ হাসান, হাসানুর রহমান, শাহাদাত হোসেন, সোহেল রানা, নুরুজ্জামান চন্দন প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/মোআ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
রাজনীতি এর সর্বশেষ
বিএনপি চায় উৎসব মুখর নির্বাচনি পরিবেশে পরিপূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হউক: আমিনুল হক

২৮ জুনই জাপার সম্মেলনের পাল্টা ঘোষণা আনিস-হাওলাদারের

সিঙ্গাপুরে সামিট চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে: কাজী মামুন

এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন উপদেষ্টা: ইশরাক

বাংলাদেশের ফুটবলে সহযোগিতায় আগ্রহী ব্রাজিল, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রদূত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বয়কট জামায়াতের

তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সন্তোষ
