বাদীর আপসের পরেও ভুয়া মামলায় গ্রেপ্তার আক্তারুজ্জামান, আ.লীগ আমলে ছিলেন গুমঘরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:২৮

জমিজমা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ চলছিল অনলাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মো. আক্তারুজ্জামানের। সেই বিরোধের জেরেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ভাষানটেক থানার এক হত্যা মামলার আসামি করা হয় আক্তারুজ্জামানকে। মামলার এজাহারে এই ব্যবসায়ীকে আওয়ামী লীগ নেতা বানানো হয়েছে। এমনকি দলটির পদ-পদবিতে থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার হয়েছিলেন এই ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে ভাষানটেক থানায় করা হত্যা মামলার বাদী ঢাকার সিএমএম (চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) আদালতে হলফনামার মাধ্যমে জানিয়েছেন, এলাকার কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে তার অজ্ঞাতসারে ভুলবশত আক্তারুজ্জামানের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলা থেকে আক্তারুজ্জামানের নাম প্রত্যাহারেরও আবেদন করেন তিনি। পরে আবেদনটি গৃহীতও হয়। এরপরও অদৃশ্য হাতের ইশারায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের অফিস থেকে আক্তরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। গ্রেপ্তারের পর একে একে তার ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলে নিচ্ছে প্রতিপক্ষ গ্রুপগুলো।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হয়েছিলেন এই ব্যবসায়ী। দেশে গুম প্রথার অন্যতম কারিগর র‌্যাবের একসময়ের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক জিয়াউল আহসান (সর্বশেষ এনটিএমসির মহাপরিচালক)। গুমের পর জিয়াকে ২২ কোটি টাকা দেন ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান। এ ঘটনায় গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারীতে অভিযোগও (অভিযোগ নম্বর ১৭০০, তাং-০৬/০১/২০২৫) দিয়েছেন তিনি; যার তদন্ত চলমান আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করার পরও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভুয়া মামলায় ১৩ ফেব্রুয়ারি অনলাইন গ্রুপের এমডি খান মো. আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২। পরে তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন রাতে আক্তারুজ্জামান অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত তিনটায় জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে একদিন পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাবের এএসপি খান আসিফ তপু বলেন, ‘আমরা ডিবির রিকুইজিশনের ভিত্তিতে আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।’

জানা গেছে, ডিএমপির ভাসানটেক থানার এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আক্তারুজ্জামান। গত বছরের ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুরের ১৪ নম্বর সড়কের মোড়ের ফিলিং স্টেশনের সামনে আনন্দ মিছিলে গুলিতে নিহত হন পোশাক শ্রমিক মো. ফজলু। এ ঘটনায় ফজলুর ভাই মো. সবুজ বাদী হয়ে ডিএমপির ভাসানটেক থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারনামীয় ১৬৫ আসামির মধ্যে ২২ নম্বর আসামি করা হয় ব্যবসায়ী খান মো. আক্তারুজ্জামানকে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আক্তারুজ্জামান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই কমিটির ১১ জন সহ-সভাপতিসহ ২৫ সদস্যের মধ্যে কোথাও আক্তারুজ্জামানের নাম নেই।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী মো. সবুজ বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে খান মো. আক্তারুজ্জামানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার নাম কীভাবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাও আমার জানা নেই। আমি আদালতে হলফনামার মাধ্যমে আক্তারুজ্জামানের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করেছি।’

আক্তারুজ্জামানের ব্যক্তিগত সহকারী জাহিদুল ইসলাম রাজু জানান, ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আক্তারুজ্জামান গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপর থেকেই ইসিবি চত্বরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে একটি দোকানের তালা ভেঙ্গে দখল নিয়েছে প্রতিপক্ষরা। সেখানে বাঁধা দিলে তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আক্তারুজ্জামান গ্রেপ্তারের পর থেকেই বিরোধী পক্ষ ঝাড়ু– মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করছে বলে জানান জাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘স্যার বিএনপি পরিবারের সন্তান। গুম সংক্রান্ত কমিশনে স্যারের করা আবেদনটি বিবেচনায় নিতে সুপারিশ করেছেন মাগুরার মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান। অথচ এখন স্যারকে (আক্তারুজ্জামান) বিরোধী পক্ষ আওয়ামী লীগ বানানোর চেষ্টা চলছে।’

আক্তারুজ্জামানের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায়। তার বাবা খান মোহাম্মদ আইব আলী মাগুরা জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আক্তারুজ্জামান বিএনপি পরিবারের সন্তান হওয়ায় বিগত সময়ে নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১৭ সালে ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন। এছাড়া ২০১৫ সালে র‌্যাবের হাতে গুম হন তিনি।

গুম সংক্রান্ত কমিশনে করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘লে. কর্নেল আজাদ (২০১৭ সালে মারা যান) ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে আক্তারুজ্জামানকে চোখ বেঁধে তৎকালীন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে একটি কালো গাড়িতে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। পরে তিনি জানতে পারেন র‌্যাব সদরদপ্তরে বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ ছিল স্থানটি। সেখানে তিনদিন বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে ৩০ (ত্রিশ) কোটি টাকা ও জমি দাবি করেন র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা। এরপর র‌্যাবের নজরদারিতে থেকে কয়েক দফায় নগদ ২২ কোটি টাকা দিয়ে জীবন ভিক্ষা পান আক্তারুজ্জামান। তার ও তার স্ত্রীর নামে থাকা জমি বিক্রি করে টাকাগুলো দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ভয় দেখিয়ে তার বেশ কিছু জমিও রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করে। সে সময় আক্তারুজ্জামানের ওপর অমানবিক নির্যাতন চলে। শরীরে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন।

র‌্যাব কর্মকর্তাকে টাকা দেওয়ার অডিও রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজের কিছু তথ্য-প্রমাণ অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান।

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/এসএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

মে মাসে ডিএমপির শ্রেষ্ঠ বিভাগ তেজগাঁও, থানা মোহাম্মদপুর

মিরপুরে প্রকাশ্যে ২২ লাখ টাকা ডাকাতি: অস্ত্রসহ ৬ জেলা থেকে গ্রেপ্তার ৬

তাণ্ডব পাইরেসিতে তিনজন গ্রেপ্তার, একজন সিনেমা হলের অপারেটর: ডিবি

সংকেত অমান্য করে ট্রাফিক পুলিশকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল অটোরিকশা, অতঃপর...

গুলশানে রাজউকের ৫ কোটির ‘রূপসা অ্যাপার্টমেন্ট’ কারা নিয়েছে, নাম জানুন

কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি সারোয়ার জাহান ঢাকায় গ্রেপ্তার

ডিএমপির দুই থানায় নতুন ওসি

মেয়রের ভূমিকায় ইশরাক হোসেন, নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে বৈঠক

ঢাবিতে ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার, কারা রাখল এসব বিস্ফোরক?

নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল থেকে ব্যাংক কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :