গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ     

গাজীপুরের টঙ্গীর আরিচপুর এলাকায় মালিহা আক্তার (৬) ও আবদুল্লাহ বিন ওমর (৪) নামে দুই শিশুকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন মা সালেহা বেগম। তবে কেন বা কী কারণে হত্যা করেছেন সে বিষয়ে কোনও তথ্য দেননি তিনি। ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে পুলিশের কাছে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার জাহিদ হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে টঙ্গীর আরিচপুর (জামাই বাজার) এলাকার ৮ তলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে দুই শিশু মালিহা আক্তার (৬) ও তার ভাই আবদুল্লাহর (৪) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ওই ঘর থেকে রক্তমাখা একটি বঁটি উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশুদের বাবা আবদুল বাতেন মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করতেন। ঘটনার দিন বড় মেয়ে নানাবাড়িতে ছিল।

শনিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন টঙ্গী পুর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে এখন তদন্ত চলছে। আমরা জানার চেষ্টা করছি, কেন বা কী কারণে দুই সন্তানকে তিনি হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

পুলিশ জানায়, সেখানে বাতেন ভাড়া থাকতেন তার আশপাশে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এসব ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা যায়, সেই সময়ের মধ্যে তাদের ঘরে বা ফ্ল্যাটে সালেহা বেগম ছাড়া আর কেউ যাতায়াত করেননি। ঘটনার পর সালেহা নিজেই পাশের বাড়ি থেকে তার দুই দেবরকে ডেকে নিয়ে আসেন। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় সন্ধ্যায় তাকে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় সালেহার হাতে কাটা দাগ দেখে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। একপর্যায়ে মধ্যরাতে সালেহা বেগম তার দুই সন্তানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।

সালেহার মা শিল্পী বেগম জানান, সালেহা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন। আব্দুল্লাহ জন্ম হওয়ার পর থেকে তার এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। মাথায় সমস্যা হলেই সালেহা একা একাই স্বামীর বাড়ি থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যেত। তবে সে কখনও পাগলামি করতো না।

সালেহার মা শিল্পী বেগম আরও জানান, বাতেন মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ছিল নানার বাড়িতে। ঈদের আগে বড় মেয়ে এখানে আসে। শুক্রবার দুপুরে শিশুদের বাবা, মা ও দাদি একসঙ্গে খাবার খান। এরপর মা সালেহা বেগম একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। দাদি উপর তলার ফ্ল্যাটে বেড়াতে যান ও বাবা তাদের ঘরে রেখে বাইরে যান। কিছু সময় পর সালেহার চিৎকারে তাদের দাদি ওপর তলা থেকে নেমে আসেন। রক্তাক্ত দুই শিশুকে দেখে তার ছেলেকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

এদিকে পুলিশ জানায়, মাইগ্রেনের সমস্যা ছাড়া আর কোন সমস্যা আছে কিনা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে। পুলিশ এখন তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

(ঢাকা টাইমস/১৯এপ্রিল/এসএ)