বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবিতে স্মারকলিপি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ২০:০৫ | প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৫৭

মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের বিচার ও বাংলাদেশের সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভুঁইয়ার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে তারা স্মারকলিপিটি জমা দেন। এসময় বায়রার সদ্য-সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজুল ইসলাম, বায়রার সদ্য-সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ নোমান চৌধুরী, ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি ও বায়রায় সিনিয়র সদস্য খন্দকার আবু আশফাক, বায়রার সদ্য সাবেক যুগ্ম মহাসচিব-১ মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামসহ বিভিন্ন বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে বায়রার সদ্য-সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমে জানান, স্বৈরাচার সরকারের সময় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট বিদেশে বসে পুনরায় বর্তমান প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মালয়েশিয়া শ্রম বাজারে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিচার ও বাংলাদেশের সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবীতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সচিব স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন এবং সমস্যাগুলো শুনেছেন। এছাড়া সবাই যেন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারেন সেটি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

বায়রায় সিনিয়র সদস্য খন্দকার আবু আশফাক বলেন, পলাতক শেখ হাসিনার দোসররা আগে সিন্ডিকেট করেছিল। তারা এখনও শ্রমবাজার ধ্বংসের জন্য পেছন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে আমরা কোনো রকমের কোনো সিন্ডিকেট চাইনা, সে যেই হোক। আমরা কোনো সিন্ডিকেট করতে দেব না, এর জন্য আমরা প্রতিবাদও করছি। কেউ যদি সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করে আমরা সেটা কঠোরভাবে প্রতিহত করব। বাংলাদেশে আর কোনো সিন্ডিকেট করতে দেওয়া হবে না।

স্মারকলিপিতে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা উল্লেখ করেছেন, স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দাতুশ্রী আমিনের নেতৃত্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শেখ পরিবারের শেখ রেহানা, সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল ও তার পরিবার, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক সচিব ড. মনিরুস সালেহীন, সাবেক এমপি বেনজির আহমেদ, সাবেক এম পি লেফটেনেন্ট জেনারেল(অব.) মাসুদ, সাবেক এম পি নিজাম হাজারী, বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার, বায়রার সাবেক মহাসচিব আলি হায়দার চৌধুরী সহ সাবেক সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের যোগসাজশে মালয়েশিয়া শ্রম বাজারে চরম অরাজকতা, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী প্রত্যেক কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে সকল খরচের অতিরিক্ত ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছিল, ফলে প্রত্যেক কর্মীকে ৪/৫ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যেতে হয়। এই চাঁদার মধ্যে ৫ হাজার রিঙ্গিত ছিল মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের অনলাইন ফি, যা গ্রহণ করতেন সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা রুহুল আমিন স্বপন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সাবেক সরকারের পক্ষে এবং ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায়, ছাত্র-জনতা হত্যার হুকুমের আসামি হিসেবে বিচ্ছিন্ন থানায় স্বপনসহ সিন্ডিকেটের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা পাচার নিয়ে দুদক ও সিআইডিতেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। , এছাড়া রুহুল আমিন স্বপন ও তার সহযোগীরা তাদের মালয়েশিয়ান পার্টনার দাতোশ্রী আমিন বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং সরকারকে চরম বিব্রত করার জন্য বিদেশে বসে পুনরায় বর্তমান প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, নির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি দ্বারা সিন্ডিকেট হওয়ায় সীমাবদ্ধতার কারণে যথাসময়ে বেশি কর্মী যেতে পারেনি। ফলে সর্বশেষ চূড়ান্ত ভাবে বহির্গমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া ১৭ হাজার কর্মীসহ মোট ৫০হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি। সিন্ডিকেটের অনিয়মের কারণে অসংখ্য কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার পর চাকুরি, বেতন ও বাসস্থান না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছে।

এই সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল করে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি উন্মুক্ত রাখার জন্য স্মারকলিপিতে দাবি জানানো হয়। তারা জানান, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কাউকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। এতে মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ কমবে। সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণে আগে বার বার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হলেও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে সেটি আর হবে না। জনশক্তি রপ্তানিতে অরাজকতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা পাচার বন্ধ হবে।

স্মারকলিপিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টির জন্য মালয়েশিয়া সরকারের সাথে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের একটি ধারা বাদ বা সংশোধন করার দাবি জানানো হয়। এর ফলে মালয়েশিয়ার সরকারের বদলে জনশক্তি নিয়োগকর্তা সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সি পছন্দ করতে পারবে। এছাড়া লোক নিয়োগে বিতর্কিত অনলাইন সাপোর্ট ব্যবস্থা বাতিলের জন্য মালয়েশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানানোর দাবি জানান রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভুঁইয়া স্মারকলিপি গ্রহণ করে রিক্রুটিং এজেন্সির দাবিদাওয়া বিবেচনার আশ্বাস দেন।

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/এলএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

৫ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়ার ৩৫ লাখ টাকা যাত্রীদের ফেরত দিল সেনাবাহিনী

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া বন্ধ করুন: ভারতকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

এখন থেকে প্রতি বছরের ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি: ফারুকী

নির্বাচনের অফিশিয়াল নির্দেশনা আসেনি, আসলে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী

২১ দিনে সেনা অভিযানে ৯৯৬ জন গ্রেপ্তার

বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে আনা যাবে যেসব পণ্য: নতুন ব্যাগেজ রুলে পরিবর্তন

বিরোধীদের দমনেই গুমকে ‘অস্ত্র’ বানিয়েছিল বিগত সরকার: গুম কমিশন

জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে গুম করা হয়েছে ২৫৩ জনকে: গুম কমিশন

গুলিবিদ্ধ হয়েও মাদকসহ তিন কারবারিকে গ্রেপ্তার, পুলিশের সাহসিকতার প্রশংসায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :